হোম সকল পোস্টসমূহ ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ৭ (Islamic Love story of husband and wife episode – 7)
ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ৭

ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ৭ (Islamic Love story of husband and wife episode – 7)

প্রকাশক দ্বীনের আলো
প্রকাশিত: সর্বশেষ আপডেট: 0 মন্তব্য 110 জন দেখেছেন

ধারাবাহিক গল্পঃ ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প (Islamic Love story of husband and wife)

শাশুড়ির মন জেতার যথেষ্ট টিপস দেওয়ার পর শায়খ ঝাড়ু নিয়ে ঘর ঝাড়ু দিতে গেলেন। আমার তো চক্ষুচড়ক অবস্থা!!তিনি নাকি ঘর ঝাড়ু দিবেন!!এটা তো আমার কাজ!!!!আমি তার হাত থেকে ঝাড়ু নিতে গেলেই তিনি চওড়া হাসি দিয়ে বললেন, “ঘরের কাজে আহলিয়াকে সাহায্য করা সুন্নাহ তো। তুমি এক কাজ করো, দেখো তো তাকে ডিম থাকার কথা, ডিম আছে কিনা। আর দেখো চালের গুড়া আছে কিনা, কাঁচা মরিচও আছে মনে হয়। তুমি বরং এক কাজ করো, নাস্তা বানানোর মতন কি কি আছে দেখ। আমি আসছি” আমি উনার কথামত সব খুঁজে বের করতে করতেই উনি চলে এসেছেন। আমার হাতে হাতে সাহায্য করলেন নাস্তা বানাতে। বানানোর পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,

–আমিনা! আম্মা ফজর পড়েই আবার ঘুমান। উঠেন সাতটার পর, বাড়ির সবাই একই সময়ে উঠে। তুমি একটা কাজ করো, নিকাব পড়ে নাও, তারপর চলো নাস্তা নিয়ে আমরা ওই ঘরে যাই!
–আচ্ছা, এই আলাদা ঘরের কি দরকার ছিল?
–ছিল বৈকি!এটা তোমার হক্ব তো। কয়েকদিন একটু কষ্ট হবে। তারপরই ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। সবর করো আমিনা!
নাস্তা নিয়ে ওই ঘরে যখন গেলাম, তখনও শাশুড়ি মা উঠেন নি। তিনি আমায় নিয়ে টেবিলে খানা সজালেন। মাকে ডেকে তুললেন। মা আমার সামনে আসা মাত্র আমি সালাম দিলাম। আর উনি উত্তর না দিয়েই বলে উঠলেন,

–তুমি এখানে কেন এসেছ? আমার সংসার ভেঙে শান্তি পাওনি? ঘর আলাদা করে শান্তি পাওনি? হাড়ি আলাদা করে শান্তি পাওনি? এখন এগুলো এনে ভালমানুষী দেখাচ্ছো? চেনা আছে তোমার মত!!!!!!!
–ও আম্মা!তুমি রাগ করে আছ এখনও?

শাশুড়ি মায়ের কথার মাঝখানে বলে উঠলেন শায়খ!!!!!!!
আমিনা, জানো!আম্মার খুব পছন্দের খানা হলো নেহারি আর চালের গুড়ার রুটি। আমি আজকে ফেরার সময় গরুর পায়া নিয়ে আসব ইনশাআল্লাহ!ও মা!নাকি খাসীর পায়া আনতাম?
–কুত্তার পায়া চিনিস? ওইটা এনে তোর বউকে খাওয়া। আমার সামনে এসব নেকামি করবি না। ভাল সাজতে হবে না।
এটা বলেই মা উনার রুমের দিকে যাচ্ছিলেন।
আমার শায়খ উনার পা জড়িয়ে ধরে ফেললেন।

–ও মা!তুমি এখনও রাগ করে আছ? তোমার ছেলের উপর রাগ করে আছ গো মা? আমি নাহয় ভুল করেছি, এই মেয়েটা কি করেছে বলো? ও তো জানতো না, আমি আলাদা ঘর করছি ওর জন্য। আর ওকে দেখতে গিয়ে তো তুমিই বলেছিলে, ওকে দেখতে মায়া লাগে খুব। এখন ওকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো কেন? ওর তো দোষ নেই।
–পা ছাড় আমার। ও ই দায়ী, আমার সংসারের ভাঙনের জন্য ও ই দায়ী। তখন বলেছিলাম ওকে দেখতে মায়া লাগে। এখন বলি শুন, এরকম কালো মেয়ে আমি আগে কখনও দেখিনাই। গায়ের রংটা কেমন ময়লা। আমার ওকে পছন্দ না। দেখি পা ছাড়। এসব নাটক করিস না।

–ইন্নালিল্লাহ!মা!এসব কি বলো? তুমি তো এমন ভাবে কথা বলো না। আমার উপর রাগ বলে তুমি আল্লাহর সৃষ্টিকে অবজ্ঞা করবে?  ও মা! তুমি আমার উপর এখনও অসন্তুষ্ট?  তাহলে দুআ করো আমি যাতে আজ রাস্তায় বের হলে এক্সিডেন্ট করে বসি। জানো তো, মায়ের দুআ বিদ্যুৎ গতিতে আল্লাহর কাছে পৌঁছে। দুআ করো যাতে আমি মরি!!!!!!!
–চুপ কর বেয়াদব!তোর মরার জন্য তোকে জন্ম দিয়েছিলাম আমি? উঠ তুই, উঠ এখনই।
–আগে বলো মাফ করে দিছ।
–তোকে মাফ করলেও ওই মেয়েকে মাফ করবোনা আমি। ওর জন্য আমার ছেলে আলাদা হয়ে!!!!!!!

কান্নায় কথা আটকে গেলো মায়ের। মা কাঁদছেন। আমার শায়খও কাঁদছেন। আমার শায়খ খুব আহ্লাদ করে মায়ের হাতে খেতে চাচ্ছেন। মা কড়া ভাবে বলে দিয়েছেন,  আমার তৈরি করা নাস্তা খাবেন না। তবুও আমার শায়খের আবদারের কাছে হেরে গিয়ে উনাক খাইয়ে দিচ্ছেন মা। আমার শায়খ আমার হাত ধরে পাশে বসালেন মায়ের হাতে খাওয়ানোর জন্য। বিড়বিড় করে কিসব বলার পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে মা খাইয়ে দিয়েছেন। আমি হতভম্ব হয়ে বসে ছিলাম। কি করা উচিৎ বুঝছিলাম না। এমন সময় বড় জা এসে টিপ্পনী কাটছিলো!!!!!!!
–ওমা! আপনি এর হাতের রান্না খেলেন? গতকাল কত বেলা করে গিয়ে দেখি ও নাপাক মেয়ে, গোসল টুকুও করেনি। আজ ও করেনি মনে হয়। এই অশূচী মেয়ের হাতের খাবার খেলেন আপনি?

শায়খকে দেখলাম প্রশস্ত হাসি হেসে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলছেন,
–আর বলিও না মা, ওকে এসব তো শেখাতে হবে তাইনা? এটা তো আমিনার প্রথম বিয়ে,  তাই কি করা উচিৎ বুঝেনা ও। আজকে কি হয়েছে শুনবে? আজকে ও!!!!!!!
–এই ছেলে!তোর মাথা খারাপ? প্রথম বিয়ে মানে কি? মেয়েদের কি দশ বারোটা বিয়ে হয় নাকি? ও মেয়ে জানেনা, তো আমাকে জিজ্ঞাস করবে না? শেখার আগ্রহ না থাকলে আমি কিভাবে শেখাব? আমি কি যেঁচে গিয়ে শেখাব নাকি?
আমার ঠেকা, হুহ!
–এই জন্যই তো কালকে তোমাকে ওই ঘরে যেতে বললাম। তুমি রাগ করে যাওনি। তুমি না শেখালে ও শিখবে কার থেকে বলো তো? তোমার চেয়ে ভাল শিক্ষিকা এই দুনিয়ায় আছে নাকি আর?

আমি বুঝতে পারছিলাম, শায়খ এসব কথা মায়ের মন নরম করার জন্য বলছেন। তাই আমার অজান্তেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠেছিল। আচমকা শাশুড়ি মা আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
–রান্না বান্না কিছু পারো? নাকি সেটাও শেখাতে হবে?
–অল্প একটু পারি, আসলে!!!!!!!
–দেখি রান্নাঘরে যাও, ফ্রিজে ডিম আছে। ভেজে আনো, যাও।
আমি আবারও গাধার মত বসে আছি। রান্নাঘর কোথায়, ফ্রিজ কোথায়, কিছুই তো জানিনা আমি। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম,
–আমি তো রান্নাঘর চিনিনা!!!!!!! কোনদিক দিয়ে!!!!!!!
–হয়েছে আর বলা লাগবেনা। রূপা, যাও তো ওকে রান্নাঘরে নিয়ে যাও। রান্নাঘরে পৌঁছে দিয়েই চলে আসবে। আর দেখি তো তোমার হাতে ফোন আছে কিনা। এখন তো মেয়েরা ইউটিউব থেকে দেখে সব রান্না করে। দেখি হাত দেখাও!!!!!!!

রূপা আমার বড় জায়ের নাম। ডিম ভাজার সময় আমি ইচ্ছে করেই নুন দিইনি, শায়খ বলেছিলেন এমন একটা ভাব করতে যাতে মনে হয় আমি একদমই আনাড়ি। এতে দুইটা লাভ,
এক.মা বুঝতে পারবেন, তাকে ছাড়া সংসার অচল।
দুই.মা রান্না শেখাবেন। এতে রান্না শেখার বাহানায় মায়ের কাছে বেশীক্ষণ থাকা যাবে। ফলে দূরত্ব ও কমে যাবে তাড়াতাড়ি।
আমি শায়খের ট্রিকস ফলো করে ডিম ভেজে মাকে দিলাম। মা একটুখানি মুখে দিয়েই বললেন,

–আল্লাহ গো!এইটা কি ভেজেছে? নুন কোথায় নুন? ? ডিম ও ভাজতে জানোনা?
–ভুলে গিয়েছিলাম মা, আমি আবার করে আনছি।
কাতর কণ্ঠে বললাম।
–থাক থাক লাগবে না। তোমার দৌড় আমার বোঝা শেষ!দেখলি বেটা, কাকে বিয়ে করে আনলি? ডিমও ভাজতে পারেনা।
–তুমি শিখিয়ে দিও তো মা। আসলেই দেখছি আমিনা রান্নাটা পারে না।
–হ্যাঁ, হ্যাঁ!শিখাতে তো হবেই। ঠেকা আমার কিনা!না শেখালে আমার ছেলেকে ডেইলি না খেয়ে, নুন ছাড়া খানা খেয়ে থাকতে হবে। আবার ঘরও আলাদা করেছে তারা। আমাকে ছাড়া ঘর চলবে? এই মেয়ে, তুমি তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। এখনই রান্নাঘরে ঢুকবে আমার সাথে।
মা কড়া নির্দেশ দিয়ে নিজের রুমে গেলেন। আমি শায়খের দিকে তাকানো মাত্রই তিনি আমায় চোখ মারলেন। মুখে সেই প্রশান্তির হাসি!!!!!!!
চলবে ইনশাআল্লাহ!!!!!!!

উপসংহার

এটি একটি ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প, যারা ইসলামিকভাবে তাদের বিবাহিত জীবনকে গড়ে তুলেছে। যদি আমাদের ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ৭ (Islamic Love story of husband and wife episode – 7) গল্পটি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করুন। ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ৭ (Islamic Love story of husband and wife episode – 7) গল্পটির ধারাবাহিকতা অনুসরন করতে ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প ১২টি পর্ব (Islamic Love story of husband and wife 12 part) পোস্টটি আলোকপাত করুন।

অনলাইন কোরআন ও হাদিসসমূহের লিঙ্ক বাংলা হাদিস বিডি

আপনার আরোও পছন্দ হতে পারে

আপনার মতামত দিন

* এই ফর্মটি ব্যবহার করে আপনি এই ওয়েবসাইট দ্বারা আপনার ডেটা সংরক্ষণ এবং পরিচালনার সাথে সম্মত হন।

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমরা ধরে নেব যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি চাইলে অপ্ট-আউট করতে পারেন৷ গ্রহণ করুন আরও পড়ুন