সুচিপত্র
৫টি কারণ কেন সময়মতো বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ: যুবকদের সমস্যা এবং পিতামাতার দায়িত্বের সমাধান করা।
বিয়ের প্রশ্ন আসলেই বাবা-মায়েরা যেসব কথা বলে থাকেঃ
১. বিয়ে যে করবি বউকে খাওয়াবি কি?
২. আগে চাকরি-বাকরি কিছু কর এরপর ওসব ভেবে দেখা যাবে।
৩. এখন তোর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার সময় ওসব মাথা থেকে ঝরে ফেল।
৪. তোর এখনো বিয়ের বয়স হয় নি।
অথচ ছেলে-মেয়ের বিয়ের বয়স অনেক আগেই হয়ে গেছে। ছেলে ঘুমাতে গেলে, তার কল্পনায় চলে আসে ডানা কাটা পরী! মেয়ে ঘুমাতে গেলে কল্পনা করতে থাকে রাজপুত্রের মতো ছেলের! এসব কল্পনা ঘুরপাক খেতে খেতে শয়তান মশাইও বিশাল চান্স পেয়ে যায়। ব্যাস ছেলে-মেয়েরা হারাম রিলেশন করা শুরু করে দেয়। পর্নগ্রাফি দেখা হয়ে যায় নিত্য দিনের রুটিন। ঘন্টার পর ঘন্টা প্রেমিকার সাথে কথা বলা, পার্কে গিয়ে নষ্টামিতে জড়িয়ে পরা, রুমডেট করা, ধর্ষণ করা, ইভ টিজিং করা ইত্যাদি আজকাল ডাল ভাত হয়ে গেছে। আর পত্রিকার পাতা খুলে এসব যখন আংকেল আন্টিদের সামনে ভেসে উঠে তখন তারা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে-
“আজ কালকার যুবসমাজদের কি যে হলো! একেবারে গোল্লায় চলে গেছে, ছি! ছি! ছি! এদের এতো অধপতন!”
আমি বলি- ও আংকেল, ও আন্টি, আপনি কি জানেন এই অধপাতের জন্য আপনারা দু’হাতে সাহায্য করেছেন!
আংকেল আন্টি হয়তো চমকে গিয়ে বলবে – “কি বলো বাবা এসব!”
জ্বি ঠিকি বলছি, আপনি আপনার সন্তানকে বিয়ের বয়স হওয়া মাত্র বিয়ে দিলেন না কেনো?
আংকেল আন্টি হয়তো আরও অধিক চমকে গিয়ে বললে-
“কি যে বলো বাবা! ওর কি এখন বিয়ের বয়স হয়েছে? মাত্র তো অনার্স এ পড়ে!”
অথচ, ছেলেদের দাড়ি গজানোর দ্বারা আর মেয়েদের ঋতু শুরু হওয়ার দ্বারা বোঝায় বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। হিসেব করে দেখুন, সেই কয়েক বৎসর আগেই বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। তাহলে আপনি জেনে শুনে বিয়ে দিতে নারাজ কেনো? আপনার ছেলের বয়স ২০, মেয়ের বয়স ১৬ বছর। আর আপনার পরিকল্পনা হলো ছেলের ২৫/২৬ বছর আর মেয়ের ১৮/২০ বছরে বিয়ে দেওয়ার! অনেকে তো আবার ২৮ বছর হওয়ার পরেও বিয়ের কোনো পাত্তা নেই! ভেবে দেখুন, তাহলে তারা এই মধ্যবর্তী সময়টা কি করবে এতদিন?
প্রেম করবে?
যেনা করবে?
পর্ন গ্রাফী দেখবে?
ইভ টিজিং করবে?
ধর্ষন করবে?
আর আপনি বসে বসে এসব পেপার পত্রিকায় দেখে গাঢ় লিকারে চা খাবেন আর দোষ দিবে শুধু যুব সমাজকে? আপনার কোনো দোষই নেই, তাইনা?
অথচ, সময় মতো যদি ছেলে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া না হয়, আর একারণে ছেলে-মেয়ে কোন গুনাহে লিপ্ত হয়, অন্য কারো সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে যায়, ইন্টারনেটে অশ্লীল ছবি দেখে, তাহলে এ গুনাহের দায়দায়িত্ব পিতা-মাতার উপর বর্তাবে। দলীল চান? আসুন একটা হাদিস শরিফ দেখি-
“সন্তান জন্মগ্রহণের পর পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো তার সুন্দর নাম রাখা এবং দীন শিক্ষা দেয়া, আর বালেগ হয়ে গেলে বিবাহ করিয়ে দেয়া। যদি বালেগ হওয়ার পরও বিয়ে না করায়, আর সন্তান কোন গুনাহে লিপ্ত হয়, তাহলে এর দায়ভার পিতার উপরই বর্তাবে।” – [বায়হাকী, হাদীস নং ৮২৯৯]
আপনার সন্তান গুনাহ করছে আর আপনি বসে বসে গুনাহের ভাগ পাচ্ছেন। কাল হিসাবের ময়দানে এই গুনাহ যদি আপনাকে জাহান্নামে যেতে হয়, তখন?
এই হাদিস শরিফ অনেক অবিভাবকরা জানেন, জানা সত্বেও বিয়ে দিতে নারাজ।
তাদের যুক্তি- “ছেলেকে বিয়ে দিলে সে খাওয়াবে কি? সে তো এখনো ছাত্র।”
অথচ, তিনিনজানে না, সে চিন্তা তার নয়, সে চিন্তা তো আল্লাহ পাকের। তিনি সকল মাখলুকের রিজিকের জিম্মাদারি নিয়ে নিয়েছেন। সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগেই রিযিকের ফায়সালা করে দিয়েছেন। তাছাড়া ছেলে কি পড়াশুনার পাশাপাশি দু’একটা টিউশনি করে কিছু রোজগার করতে পারবে না? যদি না-ও পারে তাহলে আমাদের প্রিয় রাসূল কি বলেছেন জানেন?
গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৩৭/ পানীয় দ্রব্য (كتاب الأشربة)
৩২. স্বল্প খাদ্য সমমর্তীতার ফযীলত এবং দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য এবং অনুরূপ ক্রমধারায় যথেষ্ট হওয়া
৫১৯৫। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট। আর দুজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট, আবার চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট।
ইসহাক (রহঃ) এর রিওয়ায়াতে আছে, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন” তিনি “আমি শুনেছি” কথাটি উল্লেখ করেন নি।
আপনার ফ্যামিলিতে দু’চারজন সদস্য অবশ্যই আছে, আরেক জন আসলে কি তার জন্য ব্যবস্থা হবে না? অবশ্যই হবে। তো পড়া লেখা শেষ হওয়ার আগেই বিয়ে দিচ্ছেন না কেনো? রিযিকের মালিক আল্লাহ। নাকি আপনি চাকরিকে মনে করছেন? আপনার ইমান ঠিক আছে তো! জবাব দিন। অনেক সময় দেখা যায় তাদের প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেটি নিজে লজ্জার কারণে বলতে না পেরে বন্ধু-বান্ধবদের মাধ্যমে প্রস্তাব দেয়, “আংকেল আপনার ছেলে গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য বিয়ে করার প্রয়োজন মনে করছে ।” আর আপনি তখন বলেন- তার তো এখনো লেখা-পড়াই শেষ হয়নি, বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কোত্থেকে?
আপনাকে বলছি আংকেল। আপনি আল্লাহর প্রতিজ্ঞার ব্যাপারে কতোটুকু বিশ্বাসী? আপনি জানেন না আল্লাহ্ তায়ালা প্রতিজ্ঞা করেছেন “ বিয়ে করলেই তোমাদের ধনী করে দিবো।” তবুও ছেলেকে বিয়ে দেন না আপনি! আবার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় কেবলই চাকুরীজীবী ছেলে খুঁজেন। এটা কি আল্লাহ্ তায়ালার উপর অনির্ভরশীলতারই ইঙ্গিত বহন করে না?
অথচ, একটা ভালো চাকরির পূর্বশর্তই হওয়াই উচিত “বিয়ে”। কেননা, তখন তাকে রিজিক প্রদান করার দায়িত্ব স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা নিয়ে নেন।
আল্লাহ পাক বলেছেন –
“তোমাদের মধ্য হতে যারা বিবাহহীন তাদের বিবাহ দিয়ে দাও এবং দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরকেও। তারা যদি নিঃস্বও হয়ে থাকেন তবে স্বয়ং আল্লাহ্ তাকে ধনী বানিয়ে দেবেন।” [সূরা নুর, আয়াতঃ ৩২]
অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, আজ মুসলিম উম্মাহ ইহুদী-খ্রিষ্টানদের নানামুখি ষড়যন্ত্রের শিকার। এদেশে যত এন.জি.ও আছে, এর অধিকাংশই ইহুদী-খ্রিষ্টানদের অর্থে পরিচালিত। তারা সমন্বিত প্রচেষ্টায় সরকারকে দিয়ে এ আইন পাশ করিয়েছে যে, ১৮ বছরের আগে কোন মেয়ের বিয়ে দেওয়া যাবে না। তাদের ভাষায় এটা হল “বাল্যবিবাহ”। অথচ মেয়েরা সাধারণত আরো চার/পাঁচ বছর আগেই বালেগা হয়ে থাকে।
কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একবার বলেছিলেন, এই আইনটা ১৬ বছরে করা হোক, কারণ মেয়েরা এতটা সময় (১৮ বছর) বসে থাকে না। পারিপার্শিকতাসহ বিভিন্ন কারণে তাদের পক্ষে চারিত্রিক পবিত্রতা ধরে রাখা সম্ভবপর হয়না। বন্ধু-বান্ধবের হাত ধরে চলে যায়, নানা অঘটন ঘটায়। কিন্তু এনজিওদের হৈচৈয়ের কারণে সেটা আর সম্ভবপর হয়নি। এনজিওরা এই আইনটি পাশ করিয়েছে মূলত যিনা-ব্যভিচারকে ব্যাপক করার জন্য। এর জন্য তারা মুড়ি-মুড়কির মতো দেদারসে জন্মবিরতিকরণ ট্যাবলেট ও বিভিন্ন উপকরণ সাপ্লাই দেয়। এরপরও কোন মেয়ে যদি বিপদে পড়ে যায়, পেটে অবৈধ সন্তান চলে আসে- এর জন্য তারা ‘মেরী স্টোপস’ প্রতিষ্ঠা করেছে, যার কাজ হল-মাতৃসেবার ছদ্মনামে অবৈধ গর্ভপাতের নিরাপদ আলয় তৈরি করা। আর মুসলমানরা মনে করছে, আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য সরকার কত রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। (হামারে আয়েলী মাসায়েল, ১৬০)
তাই অবিভাবকের প্রতি রিকুয়েষ্ট, আপনার ছেলে মেয়েকে গুনাহ থেকে বাঁচাতে, যেনা-ব্যাভিচার থেকে বাঁচাতে, ধর্ষন- ইভ টিজিং থেকে বাঁচতে, সমাজকে সুন্দর করতে, বিয়ের বয়স হওয়া মাত্র বিয়ের ব্যাবস্থা করে দিন। এটা সন্তানের হক।
যদি গল্পটি পড়ে আপনার ভালো লাগে তাহলে বেশি করে শেয়ার করুন। ৫টি কারণ কেন সময়মতো বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ: যুবকদের সমস্যা এবং পিতামাতার দায়িত্বের সমাধান করা (5 Reasons Why Timely Marriage Matters: Addressing Youth Issues and Parental Responsibilities)
ধারাবাহিক গল্প
ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প (Islamic Love story of husband and wife)
অনলাইন কোরআন ও হাদিসসমূহের লিঙ্ক বাংলা হাদিস বিডি