হোম সকল পোস্টসমূহ ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ৪ (Islamic Love story of husband and wife episode – 4)
ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ৪

ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ৪ (Islamic Love story of husband and wife episode – 4)

প্রকাশক দ্বীনের আলো
প্রকাশিত: সর্বশেষ আপডেট: 0 মন্তব্য 123 জন দেখেছেন

ধারাবাহিক গল্পঃ ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প (Islamic Love story of husband and wife)

উনি যত আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছিলেন, আমার মনে সন্দেহ তত ভীড় করছিলো। এশার পর তিনি আবারও আমার কোলে মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াত করেছেন!!!
'ওয়াত্বুর---------------------
ওয়া কিতাবিম মাস্তুর---------------------
ফি রক্কিম মানসুর---------------------
---------------------
---------------------
ইন্না আজাবা রব্বিকা লাওয়াক্বিউ---------------------
---------------------
---------------------
ইয়াওমা ইয়ুদা'উনা ইলা নারি জাহান্নামা দা'আ---------------------
---------------------
---------------------

ওয়া মিনাল্লাইলি ফাসাব্বিহ হু ওয়া ইদ বারন নুজুম!'
আমি খেয়াল করলাম তিনি সূরাটা তিলাওয়াত করার সময় কিছুকিছু জায়গায় এসে কেঁদে ফেলছিলেন। অবাক লাগলেও আমলে নিই নি। আমি নিশ্চুপ মুর্তির মতন বসে ছিলাম। গতকাল কোলে মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াতের এই ঘটনা আমায় যতটা আন্দোলিত করেছিল, আজ তার সিঁকি ভাগও করছেনা। বোধ হয় আমার মূর্তরূপ দেখে তিনি বলা শুরু করেছেন,

–আমিনা!তোমায় হতাশ দেখাচ্ছে কেন?
–কই নাতো!!!
–অবশ্য এই সূরাটা পড়লে হতাশ হওয়ারই কথা। ভয় করছে তোমার, তাইনা?
–না তো!কেন ভয় করবে?তাছাড়া এই সূরার বাংলা অর্থ কখনও পড়িনি, তাই!!!
আসলে আমি!!!!
–ঠিকাছে সমস্যা নেই। পড়োনি তো এখন পড়বে। রোজ একটা সূরার কমপক্ষে বিশ আয়াত অর্থ আর তাফসীর সহ পড়বে কেমন?
–ইনশাআল্লাহ পড়বো।

–এখন শুনো, এই সূরাটা বুঝিয়ে দিই তোমাকে। এই সূরাতে প্রথমে তূর পাহাড়ের শপথ নেওয়া হয়েছে। তূর পাহাড় কোনটা জানো? মূসা আলাইহিস সালাম যেই পর্বতে দাঁড়িয়ে তোমার আমার রব্বের সাথে কথা বলতেন, সেই পাহাড়ের নাম। তারপর শুনো তারপর কিতাবের নামে, বায়তুল মামুরের নামে কসম করা হয়েছে। বলোতো বায়তুল মামুর কি?
–নিশ্চিত না, তবে একটা আর্টিকেলে পড়েছিলাম, বাইতুল মা‘মুর হলো সপ্ত আকাশের ওপর অবস্থিত সে ইবাদতখানা যেখানে ফেরেশতারা ইবাদত করেন।  এ ইবাদতখানা ফেরেশতাগণের দ্বারা এমনভাবে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে যে,  প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার করে ফেরেশতা ইবাদতের জন্য প্রবেশ করেন।  যাদের কিয়ামত পর্যন্ত পুনরায় প্রবেশের পালা আসবে না।

–মাশাআল্লাহ!সঠিক বলেছ। আসলে সপ্তম আসমানে বসবাসকারী ফেরেশতাদের কা’বা হচ্ছে বায়তুল মামুর।  এ কারণেই মেরাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে পৌঁছে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে বায়তুল মামুরের প্রাচীরে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট অবস্থায় দেখতে পান। কেননা দুনিয়ার কাবা তো তিনিই নির্মান করেছেন।
তারপর শুনো, তোমার আমার রব্ব কসম করেছেন আকাশের আর সমুদ্রের নামেও। এখন তোমার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আল্লাহ যা বলবেন, তা তো সত্যিই বলবেন। তাহলে এতবার এতকিছু নিয়ে কসম কাটছেন কেন, তাইনা?

–হু, তা ঠিক। বারবার কসম কাটার কি প্রয়োজন ছিল?
–আমরা কেন কসম করি বলোতো?বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে, তাইনা?কেউ আমাদের কথা বিশ্বাস না করলেই আমরা শপথ করে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াই। কিন্তু তোমার আমার রব্বের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। খেয়াল করলে দেখবে, তিনি তখনই কসম করেছেন, যখন খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলেছেন। পাশাপাশি কুরআন মাজীদে বিভিন্ন স্থানে যে বিভিন্ন কসম করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য কথাকে সৌন্দর্যমন্ডীত,  অলংকারপূর্ণ ও বলিষ্ঠ করে তোলা, বুঝলে?

–হ্যাঁ, বুঝলাম।
–দেখ এই সূরার মূল বিষয় কি!কিয়ামতের বর্ণনা, জাহান্নামের শাস্তি, জান্নাতের প্রাচূর্য্য, এবং আমাদের দায়িত্ব। বুঝলে না তো?
খেয়াল করলে দেখবে এর ছয় থেকে ষোল নং আয়াতে কেবলমাত্র কিয়ামতের ভয়াবহতা আর জাহান্নামীর শাস্তির কথা বলা আছে। তারপর পরই দেখ,  সতের থেকে আটাশ নং আয়াত পর্যন্ত বলা আছে জান্নাতের বিবরণ সম্পর্কে।
–জান্নাতের বিবরণ?!!কি কি বিবরণ!!
–এটাই যে, ওখানে থাকবে প্রাচুর্যতা। আর!!!!!
উঁহু বলবনা। এটা তুমি পড়ে নিবে। তারপর রব্বে কারীম অবিশ্বাসীদের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, স্রস্টা সম্পর্কে, সৃষ্টি সম্পর্কে, তাদের কর্ম সম্পর্কে। আর তারপরই আল্লাহ তাআলা আমাদের কর্ম, আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। কি কি দায়িত্ব জানো?????

–না, আপনি বলুন।
–“ওয়াছবির লিহুকমি রব্বিকা ফা ইন্নাকা বিআ’ইউনিনা ওয়া সাব্বিহ বিহামদি রব্বিকা হিনা তাকুম”
এটা শেষ আয়াতের আগের আয়াত। এটাতে বলা আছে আমাদেরকে ধৈর্যধারণ করতে, তারপরই বলা হয়েছে রব্বের তাসবীহ পাঠ করতে।
তারপরের আয়াত দেখ, ওটাতে বলা আছে,
“ওয়া মিনাল্লাইলি ফাসাব্বিহ হু ওয়া ইদ বারন নুজুম”
এখানে আদেশ আছে রাতের বেলা, শেষ রাতে আর নক্ষত্র অস্ত যাওয়ার পর রব্বের তাসবীহ পাঠ করার, রব্বের মহীমা ঘোষণা করার। যদিও এটা রসূলুল্লাহর প্রতি উপদেশ ছিলো, তথাপি এটা আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। এই আমিনা, দরুদ পড়বে না?পড়ো সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। রসূলুল্লাহর নাম নিলে দরূদ পড়া লাগে তো। গতকালও দেখলাম তুমি আমায় মনে করিয়ে দাওনি।

–আফওয়ান!আমার মনে ছিল না। সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কিন্তু, মানে টা বুঝলাম না!এখানে কি তাহাজ্জুদের কথা বলা হয়েছে।
–শুধু তাহাজ্জুদ না, বরং মাগরীব, ইশা এদুটোও এই রাতের ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।  পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াত,  সাধারণ তাসবীহ পাঠ এবং আল্লাহর যিকরও বুঝানো হয়েছে।
–আর নক্ষত্র অস্ত যাওয়ার পর মানে?কোন সময়?কিসের ইবাদত?
–এটা সম্ভবত ফজরের স্বলাতের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নত স্বলাতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
আমি মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। এই লোকটা এত জানে কিভাবে?মাশাআল্লাহ!!মাশাআল্লাহ!!

কিছুক্ষণের জন্য আমার মনেই ছিলোনা, ‘নাবিলা’ আর ‘নপুংসক’ শব্দ দুইটার কথা। মনে পড়লো, যখন তিনি আমাকে কাছে টেনে নিলেন। আমি প্রবল অস্বস্তিতে ভুগছিলাম। একদিকে ‘নাবিলা’ রহস্য জানার আগে আমি তাকে এক্সেপ্ট করতে পারছিলাম না। অন্যদিকে তাকে বাধাও দিতে পারছিলাম না, কেননা তিনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে রাত্রীযাপন করলে আমি গুনাহগার হব। তবুও অস্পষ্ট কণ্ঠে বললাম,
–আই থিংক আই নিড সাম টাইম!!!!
–এন্ড সাম স্পেস অলসো, রাইট?

তার কথার ধরণ দেখে আমি অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম। কি অবলীলায়, জড়তাহীন কণ্ঠে কথাটা বলেছেন। যেন তিনি আগে থেকেই জানতেন আমি এমন কিছু বলব। আর মুখে কি প্রশস্ত হাসি!!একদম পবিত্র একটা হাসি। নাহ!এই মানুষটা আর যাই হোক, আমাকে ঠকাতে পারেন না। কিংবা এমন কিছু করতে পারেন না, যা আমায় কষ্ট দিবে। আমার হক্ব নষ্ট করবে। আমি তবুও সাহস করে আবার নাবিলার প্রসঙ্গ তুললাম। জানতে চাইলাম কে এই নাবিলা। তার খুব সংক্ষিপ্ত উত্তর ছিলো,

–তুমি এখনও এসব নিয়ে পরে আছ?আচ্ছা পাগলী তো তুমি। অবশ্য এমন পাগলি ই আমার পছন্দ। এই আমিনা, এসো শুয়ে পরি। আর তোমায় একটা গল্প শোনাই। গীরাহ বোধের গল্প।
একবার কি হয়েছে শুনো, আম্মাজান আয়শার ঘরে রসূলুল্লাহ আর তার সাহাবারা খেতে বসেছেন। এমন সময় উম্মে সালামাহ আম্মাজান তার রান্না করা খাদ্যে পূর্ণ প্লেট পাঠালেন, তখন কি হয়েছে শুনো, আম্মাজান আয়শা খুব ঈর্ষাকাতর হয়ে ওই প্লেটটাকে এক বাড়িতে ভেঙে ফেললেন। হাহা!কি বাচ্চামো তাইনা?এটাও কিন্তু এক প্রকার গীরাহ বোধ। আচ্ছা তুমি জানো গীরাহ মানে কি?গীরাহ হলো একধরণের ঈর্ষা, প্রোটেক্টিভ জেলাসি!!!!!

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তিনি আমার একহাত ধরে শুয়ে আছে। আর আমি উনাকে মেনে নিতে পারছিনা। নাবিলা রহস্য না জানা অবধি আমার শান্তি মিলবেনা হয়তো। মানুষটা মাসনুন আমল করা শুরু করেছেন। আমায় মুখে মুখে আয়াতুল কুরসী, তিনকুল, সূরা বাকারার ২৮৫-২৮৬ আয়াত পড়াচ্ছেন। আমি পলকবিহীন চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে। এই মানুষটাকে এত স্বচ্ছ,  এত পবিত্র মনে হয়, তাহলে তিনি নাবিলা প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন বারবার!!
ইনশাআল্লাহ চলবে!!!!!!!

উপসংহার

এটি একটি ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প, যারা ইসলামিকভাবে তাদের বিবাহিত জীবনকে গড়ে তুলেছে। যদি আমাদের ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ৪ (Islamic Love story of husband and wife episode – 4) গল্পটি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করুন। ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ৪ (Islamic Love story of husband and wife episode – 4) গল্পটির ধারাবাহিকতা অনুসরন করতে ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প ১২টি পর্ব (Islamic Love story of husband and wife 12 part) পোস্টটি আলোকপাত করুন।

অনলাইন কোরআন ও হাদিসসমূহের লিঙ্ক বাংলা হাদিস বিডি

আপনার আরোও পছন্দ হতে পারে

আপনার মতামত দিন

* এই ফর্মটি ব্যবহার করে আপনি এই ওয়েবসাইট দ্বারা আপনার ডেটা সংরক্ষণ এবং পরিচালনার সাথে সম্মত হন।

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমরা ধরে নেব যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি চাইলে অপ্ট-আউট করতে পারেন৷ গ্রহণ করুন আরও পড়ুন