হোম সকল পোস্টসমূহ ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ১ (Islamic Love story of husband and wife episode – 1)
ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ১

ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ১ (Islamic Love story of husband and wife episode – 1)

প্রকাশক দ্বীনের আলো
প্রকাশিত: সর্বশেষ আপডেট: 0 মন্তব্য 928 জন দেখেছেন

ধারাবাহিক গল্পঃ ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প (Islamic Love story of husband and wife)

সবসময় ভাবতাম বিয়ে মানেই এক প্লেটে দুজনের খানা খাওয়া, গ্লাসের একই দিকে মুখ লাগিয়ে পানি পান করা, একই মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করা।
ইত্যাদি ইত্যাদি!!

শুধু আমি না, হিদায়াহর পর আশি শতাংশ বোনের চিন্তা-ই থাকে এমন। আমিও তাই এসব ভেবে পুলকিত হতাম, সাজদায় গিয়ে আকুল হয়ে রব্বকে নিজের প্রয়োজন বলতাম, খুব শীঘ্রই বিয়ে হওয়ার জন্য দুআ করতাম। চোখে কেবল একটা স্বপ্ন থাকতো, একটা ছোট্ট ঘর, বিছানায় একটা বালিশ, একটা প্লেট, একটা গ্লাস, কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, কিছু তাফসীরের বই, দুইটা কুরআন, একটা জায়নামাজ।
ব্যস এতটুকুই!এতটুকু দিয়েই ছোট্ট একটা জান্নাত সাজানোর স্বপ্ন দেখতাম আমি।

“বিয়ে” একটা ইবাদত হলেও, আমার চোখে তখন “রোমান্টিসিজম” একটা ইবাদত ছিল।
বিয়ে মানেই যে কেবলমাত্র রোমান্টিসিজম নয়,বরং অন্নেক।
অঅঅন্নেক গভীর একটা ব্যাপার, তা বুঝলাম আমার জীবনে শায়খ আসার পর।

হু!’শায়খ’
আমি উনাকে শায়খ বলে ডাকি। উনি আলেম নন, আলিয়ায়ও পড়েন নি তিনি, পড়েছেন জেনারেল লাইনে।সোশ্যাল মিডিয়ার কোনও পরিচিত মুখ নন তিনি। তার একেকটা পোষ্টে কয়েকশত লাইক, শতাধিক কমেন্ট, একগাদা শেয়ার হয়না। তারপরও তিনি এমন একজন মানুষ, যাকে না দেখলাম বুঝতাম ই না, প্রকৃত দ্বীনদার কেমন হয়।
পাঁচ ভাইয়ের মাঝে মেঝো জন আমার শায়খ। জাহেলিয়াতে আচ্ছন্ন পরিবারের সকল বিদ্রুপকে উপেক্ষা করে তিনি আমাকে বিয়ে করেছেন মাসজিদে,মোহর ছিলো দশহাজার টাকা।

কি নাক সিঁটকাচ্ছেন? ভাবছেন মাত্র দশ হাজার টাকা কিসের মোহর!!
প্রতি মাসে নয়হাজার টাকা যার বেতন ছিলো, তার পক্ষে কয়েক লাখ টাকা দেনমোহর দিতে বিলম্ব হলেও, ধার্য করাটা নিশ্চয়ই অসম্ভব ছিলো না। আমার বাবা যখন পুরোই প্রশ্নবিদ্ধ মোহর নির্ধারণের এই অঙ্ক দেখে,অামার শায়খ একদম প্রশান্তির হাসি হেসে বলেছিলেন, “সাফিয়্যা মায়ের মোহর ছিল কেবলমাত্র তার মুক্তি,অার বাকি আম্মাজানদের মোহর বারো উকিয়ার বেশী ছিলোনা।”
জানিনা বাবা কি বুঝেছিলেন, তবে এই নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেন নি।

শ্বশুর বাড়িতে এসে দেখলাম আমার হক্ব আদায়ের জন্য তিনি আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করেছেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেউ আমাকে ওয়েলকাম তো করেইনি, বরং বিদ্রুপের হাসি হেসেছিলেন। বড় জা তো টিপ্পনী কেটে বলেই ফেলেছিলেন,
‘আরও কত কি দেখব। বোরকা, নিকাব, মোজা পরে কোন ভুতনি আসছে কে জানে।’
আমার মন খারাপ হলেও শায়খের মুখে দেখেছিলাম একগাল হাসি। হেসে হেসেই উনি বলে উঠলেন,সূরা আহযাব, আয়াত তেত্রিশ, আলহামদুলিল্লাহ, মাশাআল্লাহ।

ওই মুহুর্তে লোকটাকে আমার পাগল ছাড়া কিছু মনে হয়নি।
আশ্চর্য হয়েছিলাম রাত্রীবেলা।
বিয়ে নিয়ে একগাদা স্বপ্ন দেখলেও রাতটুকু নিয়ে অদ্ভুত একটা চিন্তা ছিল। কিন্তু উনাকে দেখলাম বেশ হাসিমুখ নিয়েই রুমে আসলেন, আমায় চড়া গলায় সালাম দিলেন, এবং আমার কোলে মাথা রেখে চোখ বুজলেন। আমি হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে ছিলাম, কি করা উচিৎ মাথায় আসছিলো না। এরই মাঝে উনি গুণগুণ করে পড়া শুরু করেছেন,

"[1] হাল্ আতা-কা হাদীছুল্ গ-শিয়াহ্। [2] উজু হুঁই ইয়াওমায়িযিন্ খ-শি‘আতুন্। [3] ‘আ-মিলাতুন্ না-ছিবাতুন্। [4] তাছ্লা-না-রন্ হা-মিয়াতান্। [5] তুস্ক্বা-মিন্ ‘আইনিন্ আ-নিয়াহ্। [6] লাইসা লাহুম্ ত্বোয়া‘আ-মুন্ ইল্লা-মিন্ দ্বোয়ারীই’ [7] ল্লা-ইয়ুস্মিনু অলা-ইয়ুগ্নী মিন্ জু‘ইন্। [8] উজু হুই ইয়াওমায়িযিন্ না-‘ইমাতুল্। [9] লিসা’য়িহা-র-দ্বিয়াতুন্। [10] ফী জ্বান্নাতিন্ ‘আ-লিয়াতি। [11] লা-তাস্মা‘উ ফীহা-লা-গিয়াহ্। [12] ফীহা-‘আইনুন্ জ্বা-রিয়াহ্। [13] ফীহা-ছুরুরুম্ র্মাফূ ‘আতুও। [14] অ আক্ওয়া-বুম্ মাওদু‘আতুঁও। [15] অনামা-রিকু মাছ্ ফূফাতুঁও। [16] অযারা বিয়্যু মাব্ছূছাহ্। [17] আফালা- ইয়ান্জুরূনা ইলাল্ ইবিলি কাইফা খুলিক্বত্ [18] অইলাস্ সামা-য়ি কাইফা রুফি‘আত্। [19] অইলাল্ জ্বিবা-লি কাইফা নুছিবাত্। [20] অইলাল্ র্আদ্বি কাইফা সুত্বিহাত্ [21] ফা যার্ক্কি; ইন্নামা য় আন্তা মুযার্ক্কি। [22] লাস্তা ‘আলাইহিম্ বিমুসাইত্বিরিন্। [23] ইল্লা-মান্ তাওয়াল্লা-অকাফার। [24] ফাইয়ু‘আয্যিবুহুল্ লা-হুল্ ‘আযা-বাল্ আর্ক্বা। [25] ইন্না ইলাইনা য় ইইয়া-বাহুম্ [26] ছুম্মা ইন্না ‘আলাইনা- হিসা-বাহুম্।" (সূরা আল-গাশিয়াঃ মাক্কী)

যতটা সময় উনি পড়ছিলেন আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতন উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বারবার মাথায় বাড়ি খাচ্ছিল, এটা সুন্নাহ না? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো আম্মাজানের কোলে মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াত করতেন।
কি একটা প্রশান্তি! কি অদ্ভুত প্রশান্তি! আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। উনি কোল থেকে মাথা না সরিয়েই আমায় জিজ্ঞাস করলেন ইশা পড়েছি কিনা। আমি না সূচক মাথা নাড়তেই উনি একলাফে উঠে পড়লেন, নির্দেশের স্বরে ইশা পড়তে বললেন।

আমিও ইশার সালাত আদায় করলাম।সাজদায় গিয়ে আর মাথা তুলতে পারছিলাম না। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। কিসের কান্না বুঝিনি, শুধু কেঁদেই গেছিলাম। সালাত শেষ করে উঠেই দেখি তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন। আমিও আর না ডেকে ঘুমিয়ে পরি। রাতের খাওয়াটুকুও হয়নি সেদিন। মাঝরাতে ঘুম ভাঙলো চোখেমুখে হালকা মতন পানির ছিটা লাগায়। উঠে দেখি উনি বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছেন, ঘড়িতে সবে আড়াইটা বাজে।ফজরের এখনও ঢের বাকি। উনি এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙালেন কেন!
উঠে বসতেই উনি যন্ত্রের মতন বলে চললেন।

“এত গাঢ় ঘুম কারও হয়? রাতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ডেকে দেননি কেন? রাতে নিশ্চয় না খেয়ে ছিলেন? শরীরের একটা হক্ব আছে না? নিশ্চয় খিদা লেগেছে। তাড়াতাড়ি উঠুন, হাতমুখ ধুয়ে আসুন, আমি তরকারি গরম করেছি। ভাত বাড়ছি চলুন।”
উনি এমনভাবে কথা বলছিলেন যেন আমি উনার কত দিনের চেনা। কথায় একটুও জড়তা নেই। আমার একটু অস্বস্তি লাগলেও ভালই লাগছিল। ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখি উনি খাবার সামনে নিয়ে বসে আছেন। তবে এক প্লেটে না, আলাদা আলাদা প্লেটে, গ্লাস ও দেখছি দুইটা।
আমি পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম, কোলে মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াত করা সুন্নাহ, এটা জানেন, আর একই পাত্রে, একই গ্লাসে খাওয়া যে সুন্নাহ, ওটা কি তিনি জানেন না?
চাপা একটা অভিমান জমা হলো মনে। অভিমান নিয়েই খেতে বসলাম।
চলবে ইনশাআল্লাহ!!!!!!!

উপসংহার

এটি একটি ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প, যারা ইসলামিকভাবে তাদের বিবাহিত জীবনকে গড়ে তুলেছে। যদি আমাদের ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ১ (Islamic Love story of husband and wife episode – 1) গল্পটি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করুন। ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ১ (Islamic Love story of husband and wife episode – 1) গল্পটির ধারাবাহিকতা অনুসরন করতে ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প ১২টি পর্ব (Islamic Love story of husband and wife 12 part) পোস্টটি আলোকপাত করুন।

অনলাইন কোরআন ও হাদিসসমূহের লিঙ্ক বাংলা হাদিস বিডি

আপনার আরোও পছন্দ হতে পারে

আপনার মতামত দিন

* এই ফর্মটি ব্যবহার করে আপনি এই ওয়েবসাইট দ্বারা আপনার ডেটা সংরক্ষণ এবং পরিচালনার সাথে সম্মত হন।

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমরা ধরে নেব যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি চাইলে অপ্ট-আউট করতে পারেন৷ গ্রহণ করুন আরও পড়ুন