হোম সকল পোস্টসমূহ ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ২ (Islamic Love story of husband and wife episode – 2)
ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ২

ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ২ (Islamic Love story of husband and wife episode – 2)

প্রকাশক দ্বীনের আলো
প্রকাশিত: সর্বশেষ আপডেট: 0 মন্তব্য 195 জন দেখেছেন

ধারাবাহিক গল্পঃ ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প (Islamic Love story of husband and wife)

খাওয়ার সময় লক্ষ করলাম তিনি সবকিছুই ঠিকঠাক রেখেছেন। অর্থাৎ দস্তরখানা বিছিয়েছেন, এক হাঁটু বিছিয়ে আরেক হাঁটু উঠিয়ে বসলেন, শব্দ করে বিসমিল্লাহও পড়লেন।

সামনে থেকে অল্প অল্প করে খাচ্ছেন, খাওয়া শেষে হাতের আঙুলগুলো যথাক্রমে মধ্যমা, শাহাদাত, বৃদ্ধা আঙুল চেটে খাচ্ছেন। পানি খাওয়ার সময়ও দেখলাম একাগ্রতা!
বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে গ্লাস ধরে তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করলেন।
এমনকি খাওয়া শেষে দস্তরখানা আগে উঠিয়ে,তারপর তিনি জায়গা থেকে উঠেছেন।
আমার অশান্তি লাগছিল।

যে লোকটা এতকিছু মেইনটেন করেন, সে স্ত্রীর সাথে একই পাত্রে খেলেননা কেন?! মনে এক ধরণের ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছিল। আসলে কিছু পুরুষ থাকেই এমন, দেখা যায় হজ্জ করে এসেছে,অথচ স্ত্রীর সাথে ভালবাসা প্রকাশ করেন কম,হায়েজের সময় স্ত্রীকে অশুচি মনে করেন, এমনকি স্ত্রীকে সবসময় নিচু চোখে দেখেন!

উনিও বোধহয় তেমনই! গা জ্বলে যাচ্ছিলো রাগে। মন চাচ্ছিল আয়শা আম্মাজানের মতন করে প্লেট টা ভেঙে ফেলি!!
খাওয়া বন্ধ করে রাগে ফুঁসছিলাম, উনি কোথায়, কি করছেন সেদিকে খেয়ালও ছিল না। একদৃষ্টে ভাতের দিকে তাকিয়ে আছি,এমন সময় কানে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করলাম!কে যেন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,

“আউযুবিল্লাহ পড়ো, রাগ জাহান্নাম থেকে আসে”
চমকে তাকিয়ে দেখি উনি, আমার শায়খ, একগাল হাসি নিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছেন। আমি আবারও হতবাক, এই মূহুর্তে কি করা উচিৎ সেটাই খুঁজে পাচ্ছিনা। অন্য কেউ হলে হয়তো লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলতো। কিন্তু আমি অপলক চেয়ে ছিলাম। হাসিতে দাঁতের মাড়ি দেখা যাচ্ছে, লম্বাটে চেহারা, গালভর্তী দাঁড়ি, হাসির চোটে তার চোখগুলোও যেন হাসছে,নাকে একটা কালোমতন দাগ। আঘাত পেয়েছেন মনে হয় কখনও।

কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানিনা, হুশ ফিরলো উনার চোখ মারা দেখে।
জ্বি হ্যাঁ! ঠিকই শুনেছেন, আমার চাহনী দেখে আমায় পরপর তিনবার চোখ মারলেন উনি!!
হুজুর মানুষ চোখ মারে।
ভাবা যায়!!!

লজ্জায় চোখ নামিয়ে উনার মুখে মুখে আউযুবিল্লাহ পড়লাম। ধীরে সুস্থে খাবার শেষ করলাম। ঘড়িতে দেখি তিনটা পনের বাজে। তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য অযু করে এলাম। এসে দেখি উনি বৈঠকে আছেন। সম্ভবত তাশাহুদ পড়ছেন, আমি আবারও খেয়াল করলাম তাকে। চোখেমুখে কি একটা প্রশান্তি, ঠোঁটে একপ্রকার হাসির আভা লেগে আছে। মনে হচ্ছে তিনি বুঝি তার খুব কাছের কারও সাথে খোশগল্পে মগ্ন! আমি অভিভূত হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।উনাকে সালাম ফেরাতে দেখে আমি তড়িঘড়ি করে চোখ নামালাম। উনি আমায় নামায পড়তে বলে বিছানায় বসলেন। আমি স্বলাত শেষ করে দেখি এখনও চারটা বাজেনি। ফজরের ওয়াক্ত শুরু হবে পৌনে পাঁচটায়। ভাবলাম একটু কুরআন পড়বো, কিন্তু এখানে কুরআন কোথায় তা তো জানিনা।

উনাকে জিজ্ঞাস করতেই উনি আমায় বিছানায় বসতে বললেন। আবারও রাতের মতন আমার মাথায় কোল রেখে।
ইশ!না না!কি সব বলছি!
আমার কোলে মাথা রেখে বললেন,
“চলো মুখে মুখে পড়বে।বলো আউযুবিল্লাহ।
বিসমিল্লাহ।

হাল্ আতা-কা হাদীছুল্ গ-শিয়াহ্।
আমিও পড়া শুরু করলাম,
হাল্ আতা-কা হাদীছুল্ গ-শিয়াহ্।
উজু হুঁই ইয়াওমায়িযিন্ খ-শি‘আতুন্।
আ-মিলাতুন্ না-ছিবাতুন্।
———————–
———————–
———————–“

উনার মুখে মুখে পড়ছিলাম। কখনও কখনও একটা আয়াতকে কয়েকভাগে পড়েছি, ধীরে ধীরে পুরো সূরা শেষ করলাম। আমি মন্ত্রমুগ্ধ! এই মানুষটাকে বুঝতে পারছিনা! কখনও ভাবিনি এভাবে কুরআন পড়বো, কখনও এভাবে কুরআন পড়ার স্বপ্ন দেখিনি। মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধায় আমি একাকার হয়ে ছিলাম। না চাইতেই এত বড় একটা ঘটনার সাক্ষী করেছেন আল্লাহ আমায়! কৃতজ্ঞতায় চোখে পানি চলে এলো! মনে মনে শুধু পড়ছিলাম, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল।’
সূরাটা শেষ করেই তিনি বলা শুরু করলেন,

–বলোতো আমিনা, এটা কোন সূরা ছিলো?
–আল গশিয়াহ।
–জানো এটা মাক্কি সূরা,গাশিয়াহ কিয়ামতেরই আরেকটা নাম, আমি রাতেও এটা পড়েছিলাম, মনে আছে?আমার খুব প্রিয় সূরা এটা। তোমার ভাল লাগেনা সূরাটা?
–আমি তো আলাদাভাবে কখনও ভাবিনি এটা নিয়ে।তবে ভালই লাগে!!!
–হ্যাঁ!হ্যাঁ!ভাল লাগবেনা কেন বলো?এটাও তো তোমার আমার রব্বেরই বাণী, তাইনা? পাশাপাশি সূরাটায় দেখো,প্রথম সাত আয়াতে কিয়ামতের কথা, জাহান্নামের কথা,জাহান্নামীর শাস্তির কথা বলা আছে। তারপর আট থেকে ষোল আয়াতে কেবলমাত্র তাদের কথা বলা হয়েছে, যা আমরা সবাই হতে চাই। বলোতো কাদের কথা?

–কাদের কথা? বলতে পারছিনা! আমি কখনও অর্থসহ পড়িনি সূরাটা!
–কেন পড়োনি আমিনা! আল্লাহর প্রথম বাণীই তো হলো, ইকরা।পড়ো!!!
পড়ার তাগিদ স্বয়ং তোমার আমার রব্ব দিয়েছেন। তারপরও পড়োনি কেন? আচ্ছা পড়োনি সমস্যা নেই।আমার সাথে পড়বে। এখন শুনো কি বলি!!!!

এই আমিনা! শুনছো? নাকি ঘুম আসছে?
–না না! শুনছি, আপনি বলুন।
–হ্যাঁ শুনো, পরের ষোল আয়াত অবধি আল্লাহ জান্নাতিদের কথা বলেছেন। তারপর সরাসরি অস্বীকার কারীদের,অবিশ্বাস কারীদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, কি প্রশ্ন ছুঁড়েছেন জানো? তিনি প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, সৃষ্টি নিয়ে, এই উট, আকাশ, পাহাড়, জমিন নিয়ে!!!
প্রকৃতির ভারসাম্য নিয়ে।তারপর রসূলুল্লাহকে উপদেশ দেওয়ার আদেশ করে আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, আমাদের সবাইকে তার কাছে ফিরে যেতে হবে।অবিশ্বাসীদের কাছ থেকে তিনিই হিসাব নিবেন!!!!
এই আমিনা,জানো এই আয়াতটা যখন পড়ি,

“ইন্না ইলাইনা ইয়াবাহুম” কেমন স্বস্তি লাগে!!একদিন আমরা আমাদের রব্বের কাছে যাব।তখন কি হবে বলো তো? খুব লোভ হয়, ওই আয়াতটা শুনতে। কোন আয়াতটা জানো, ওই যে!!!!
সালামুন ক্বওলাম্মির রব্বির রহীম, তাইনা?
–হ্যাঁ,হ্যাঁ, সূরা ইয়াসিনের আটান্ন নং আয়াত টা!!!!
দূর থেকে আযান শোনা যাচ্ছে, তিনি আমার কোল থেকে মাথা উঠিয়ে ইস্তেঞ্জায় গেলেন, ওযু করে এসে দুই রাকাত নামায পড়লেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

“চলো আজকে আমি জামাআত করে নামায পড়াই। তুমি পিছনে দাঁড়াও আমার। এসো!! আমি একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি। আর পাঁচটা বাসর রাত কেমন হয় আমি জানিনা। তবে আমার বাসর রাত আল্লাহর রহমতে পরিপূর্ণ, একদম পরিপূর্ণ!!!!!
আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা ভরে মাথা নোয়ালাম আমি। কে জানে, এত প্রশান্তিময় সাজদা হিদায়াহর পর আগে কখনও দিতে পেরেছিলাম কিনা!
ইনশাআল্লাহ চলবে!!!!

উপসংহার

এটি একটি ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প, যারা ইসলামিকভাবে তাদের বিবাহিত জীবনকে গড়ে তুলেছে। যদি আমাদের ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ২ (Islamic Love story of husband and wife episode – 2) গল্পটি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করুন। ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ২ (Islamic Love story of husband and wife episode – 2) গল্পটির ধারাবাহিকতা অনুসরন করতে ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প ১২টি পর্ব (Islamic Love story of husband and wife 12 part) পোস্টটি আলোকপাত করুন।

অনলাইন কোরআন ও হাদিসসমূহের লিঙ্ক বাংলা হাদিস বিডি

আপনার আরোও পছন্দ হতে পারে

আপনার মতামত দিন

* এই ফর্মটি ব্যবহার করে আপনি এই ওয়েবসাইট দ্বারা আপনার ডেটা সংরক্ষণ এবং পরিচালনার সাথে সম্মত হন।

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমরা ধরে নেব যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি চাইলে অপ্ট-আউট করতে পারেন৷ গ্রহণ করুন আরও পড়ুন