হোম সকল পোস্টসমূহ ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ৩ (Islamic Love story of husband and wife episode – 3)
ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ৩

ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ৩ (Islamic Love story of husband and wife episode – 3)

প্রকাশক দ্বীনের আলো
প্রকাশিত: সর্বশেষ আপডেট: 0 মন্তব্য 137 জন দেখেছেন

ধারাবাহিক গল্পঃ ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প (Islamic Love story of husband and wife)

ফজরের পর আমি মূর্তির মতন বসে ছিলাম। নতুন বউ হিসেবে ফজরের পর কি করা উচিৎ অামি বুঝতে পারছিলাম না।তারউপর রাত আড়াইটা হতে জেগে আছি।বালিশে একটু হেলান দিতেই ঘুমিয়ে গেলাম।ঘুম যখন ভাঙলো,তখন বড় জার বিদ্রুপ শুনতে পাচ্ছিলাম,ঘড়িতে প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে।
আমায় উঠে বসতে দেখে বড় জার টিপ্পনী শুরু হলো।

–ও মা, এই ঘরে আসেন।নবাবজাদির ঘুম ভাঙছে। হিহি!!!! আমার বিয়ের পরদিন আমি কোন সকালে উঠছিলাম, আর এই মেয়ে!!
মা গো মা!! গোসলও করোনি এখনো! ছিহ! কি অশুচি! নাপাক একটা মেয়ে!!!!
এতকিছু জানো, আর এটা জানোনা যে, গোসল কখন ফরজ হয়?কি লজ্জা! ও মা দেখে যান, আপনার ছেলে মসজিদে গিয়ে কোন খবিশকে তুলে আনছে!!!!

আরও কতক্ষণ চলতো উনার টিপ্পনী কাটা কি জানি! আমি উনার কথার মাঝেই বলে উঠলাম—
–আসসালামু আলাইকুম!কেমন আছেন আপা?
–কিসের আপা? বড় বউ আমি এই সংসারের, ভাবি ডাকবে, বুঝছো? সালাম দিয়ে নিজেকে পীরনি ভাবো? এহহ! আইছে বড় পীর! যাও গোসলে যাও। নাপাক কোথাকার। কেন যে এই নাপাকের ঘরে আসছি, কে জানে!থুঃ!
কি অদ্ভূত মানসিকতা! যা তা বলে চলে গেলেন। উনি বের হয়ে যাওয়ার পরপরই শায়খ এলেন ঘরে।

–আসসালামু আলাইকুম! ঘুম ভাঙলো?
ক্লান্ত ছিলে বলে ঘুমিয়ে পরেছিলে, তাই আর ডাকিনি। কিছু তো খাওনি না? ইশ! খাবে কিভাবে? এখনও তো হাতমুখও ধোও নি। যাও তুমি হাতমুখ ধুয়ে আসো।
–ওয়া আলাইকুমুস সালাম!আসলে—
আমি তো মিসওয়াকের জন্য কিছু আনি নি।
–ওহ।! আমার একদম মনে ছিলোনা, দাঁড়াও আমি এখনই ব্যবস্থা করি।

দুই মিনিটের মাথায় কোথা থেকে একটা ডাল এনে দিলেন তিনি। আমার আবারও প্রচুর অভিমান হলো। নিজেরটা দিলে কি হতো যে আরেকটা এনে দিতে হলো? সুন্নাহ তো একই ডাল দিয়ে দুজনের মিসওয়াক করা।লোকটার মনে হয় শূচীবায়ু আছে। সেসব নিয়ে না ভেবে ইস্তেঞ্জায় গেলাম। এসে দেখি ওমা! উনি প্লেট সাজিয়ে বসে আছেন। এই লোকটা কি খাওয়া ছাড়া কিছু বুঝেন না? রাত আড়াইটা বাজে খেলেন, এখন আবার সকাল আটটা বাজতে না বাজতেই!!!!
কি অদ্ভুত!আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেই বলা শুরু করলেন,

–আজ তো ওয়ালিমা আছে। সারাদিন ঝামেলায় কাটবে। কখন খানা কপালে জুটবে কে জানে। তুমি বসো,কয়েকটা খেঁজুর খাও আগে। এগুলা আজওয়া খেঁজুর, দেশে পাইনি, সৌদি থেকে আনিয়েছি। জমজমের পানি ছিলো, শেষ হয়ে গেছে। নরমাল পানি দিয়েই খাও। শুনো ঘর ঝাড়ু দেওয়া হয়ে গেছে। রাতে খেয়েছিলাম যে, প্লেট বাটি ধোয়াও শেষ। এখন কাজ বলতে, বিছানাটা গুছানো বাকি, আর!!!!!
আচ্ছা, বাদ দাও। তুমি আজ বিছানাটা গোছাও। কাল থেকে আমিও জয়েন করব ইনশাআল্লাহ! এসে তাড়াতাড়ি খাও। আমাকে আবার ওদিকে যেতে হবে। ওয়ালিমার কাজে কোনও ত্রুটি যেন না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। শুনো, তুমি ঘর থেকে নড়িও না। আমি দেখছি মাকে বুঝিয়ে পাঠাচ্ছি তোমার কাছে। এখনও দাঁড়িয়ে কেন?বসো।

এবার খেয়াল করে দেখলাম, প্লেট একটা হলেও গ্লাস কিন্তু দুইটাই আছে। খাওয়ার এক পর্যায়ে, উনি আচমকা আমার থুতনিটা তুলে ধরে কিছু একটা খাইয়ে দিলেন। আমি একটু চিবিয়েই বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছি, আর উনি খিলখিল করে হাসছেন। হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরেছেন! কি অদ্ভুত! উনি আমার মুখে খেঁজুরের পরিবর্তে সুপারির দানা গুঁজে দিয়েছেন। তাও এক্কেবারে কাঁচা! ইশ! কি বিদঘুটে স্বাদ!!
–বুঝলে আমিনা, মাঝে মাঝে আহলিয়ার সাথে মজা করা লাগে। তাকিয়ে দেখছো কি? মুখ থেকে ফেলো ওটা।কস লাগছে না? ফেলো। বাকিটা খেয়ে শেষ করো, আমি যাই কেমন?

হনহন করে বেরিয়ে গেলেন এইটুকু বলে। উনি চলে যাওয়ামাত্র আমার হাসি পেলো। আমি শব্দ করে হেসে ফেললাম। যাহোক, উনি বলে গিয়েছিলেন মাকে পাঠাবেন। কিন্তু প্রায় ঘন্টা দুয়েক পার হওয়ার পরও মা আসেন নি। আমার প্রচণ্ড একা লাগছিলো। কয়েকবার ভাবলাম, বের হয়ে দেখব। কিন্তু অচেনা জায়গা, তারউপর উনি বারণ করেছেন, তাই আর বের হইনি। বাবাকে ফোন করে কিছুক্ষণ কথা বললাম। তারপরও সময় কাটছিলো না দেখে ফেসবুকে লগিন করলাম, রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস বদলালাম, আপুদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।তারমাঝেই বড় জা এসে পরেছেন।

–তোমার মত মেয়ে আমি জন্মে দেখিনি। কোথায় সকাল সকাল উঠে শ্বশুর শ্বাশুরির সেবা করবে, তা না।মোবাইল টিপছো। অবশ্য এটাই তো হওয়ার কথা। যেমন দেবা, তেমন দেবী।এ খন শুনো কি বলি, এত দেরী করে ঘুম ভাঙলো কেন? রাতে কয়বার!!!!!
হিহি!হাহাহা!ওমাগো! তবে হয়নি বলেই তো মনে হয়। আমার দেওর কি পুরুষ নাকি? নপুংসক বলেই মনে হয়।না হয় নাবিলা মেয়েটা ওকে ছেড়ে চলে যাবে কেন? নিশ্চয় কিছু গরমিল আছে। নাহয় এত ভাল!!!!
নাবিলা!!!!!!

চমকে উঠলাম আমি!!
উনি বকবক করেই যাচ্ছেন। আমার সেদিকে খেয়াল নেই। আমার শুধু রাতের কথা মাথায় ঘুরছে। সত্যিই তো উনি আমার কাছে আসেন নি। তাছাড়া এই নাবিলা টাই বা কে? উনার প্রাক্তন? কই!আমায় তো বলেন নি। অস্থির লাগছিলো। চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভব করছিলাম, সেটা মাথার একপাশে নাকি বুকে কে জানে!!!!
কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করলাম,

–আপা! নাবিলা কে?
–আবার আপা? মা বাবা কি এতটুকু শিখিয়ে পাঠায়নি যে, ঘরের বউকে ভাবি বলা লাগে? অবশ্য কি শেখাবেন আর? কোনও মতে চোরের মতন গছিয়ে দিয়েছেন মেয়েকে। আমার বিয়েতে সারে চার ভরি স্বর্ণ এসেছিল, আর তোমার? হাহ! নাবিলা তোমার বরের কোন জান্নাতি হুর, সেটা তোমার বর থেকেই জেনে নাও। যত্তসব!

রাগে গজগজ করে চলে গেলেন উনি। এদিকে আমার মাথা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। নাবিলা কে? উনার প্রেমিকা? নাকি প্রথম স্ত্রী?
কই উনি তো বলেন নি উনি ডিভোর্সি কিনা!
তাহলে?
নাকি সত্যিই উনি নপুং—–
না না! কি সব ভাবছি! কিন্তু উনি ই বা কাল আমার কাছে এলেন না কেন!!
ভাবছিলাম,আর তড়পাচ্ছিলাম!প্রচুর কষ্ট হচ্ছিলো!!!!!

ওয়ালিমায় বাবা মা এসেছিল। ছোট বোনটার গায়ে নাকি কে মরিচের গুড়া গোলানো পানি মেরেছে, সেসব নিয়ে ব্যস্ত সবাই। আমার সেদিকে ভ্রুক্ষেপও নেই!
দুপুরে এলেন উনি। কিছু প্রয়োজন কিনা খোঁজখবর নিলেন। আবার চলে গেলেন। সারাদিন আর দেখা নেই।ফিরলেন মাগরিবের পর। আমি কিন্তু ততক্ষণ না খেয়ে আছি। আসলে খিদার কষ্ট অনুভবই হচ্ছিলো না। মাথায় শুধু ‘নাবিলা’,’নপুংসক’ শব্দগুলো ঘুরছিলো। সারাদিন কোনওমতে চোখের পানি আটকে রেখেছিলাম। যখনই উনি ঘরে এসে সালাম দিলেন, আর আটকাতে পারিনি। ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম। খুব চেষ্টা করে শুধু এটুকু জিজ্ঞেস করলাম,
‘নাবিলা এখন কোথায়?’

উনি আমার পাশে বসেই আমার কাঁধে হাত রেখে কান্নার কারণ জানতে চাচ্ছিলেন। প্রশ্ন শুনে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালেন। তার চোখে রাগ নাকি ভয় বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু সেটা মূহুর্তের জন্যই।তারপরই ফিক করে হেসে দিলেন তিনি। জড়তাহীন কণ্ঠে জবাব দিলেন,
–নাবিলা বড়ভাবির বাবার বাড়িতে, হটাৎ এই প্রশ্ন কেন? তাছাড়া তুমি নাবিলার কথা জানলেই বা কি করে?জেনেছ বেশ ভাল! এটা নিয়ে কাঁদার কি আছে শুনি? ভয় হচ্ছে? আমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় হচ্ছে? হাহাহা!
ভালবেসে ফেলেছ আমাকে?এক রাতেই? হোহোহো!সব বাদ দাও, খিদা লেগেছে? কিছু খাবে? আচ্ছা, পরে খেও। জানো আজ কি হয়েছে, আমার ছাত্র এসেছিল ওয়ালিমায়!!!!!

উনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে অন্য কথা বলছেন। এদিকে আমি তড়পাচ্ছি! উনি কি লুকাচ্ছেন আমার থেকে? উনাকে তো বেশ দ্বীনদার ই মনে হচ্ছিলো সকাল থেকে। তাহলে কি সবই নাটক? ভণ্ডামী!!
ইনশাআল্লাহ চলবে!!!!!

উপসংহার

এটি একটি ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প, যারা ইসলামিকভাবে তাদের বিবাহিত জীবনকে গড়ে তুলেছে। যদি আমাদের ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ৩ (Islamic Love story of husband and wife episode – 3) গল্পটি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করুন। ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব – ৩ (Islamic Love story of husband and wife episode – 3) গল্পটির ধারাবাহিকতা অনুসরন করতে ইসলামিক স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প ১২টি পর্ব (Islamic Love story of husband and wife 12 part) পোস্টটি আলোকপাত করুন।

অনলাইন কোরআন ও হাদিসসমূহের লিঙ্ক বাংলা হাদিস বিডি

আপনার আরোও পছন্দ হতে পারে

আপনার মতামত দিন

* এই ফর্মটি ব্যবহার করে আপনি এই ওয়েবসাইট দ্বারা আপনার ডেটা সংরক্ষণ এবং পরিচালনার সাথে সম্মত হন।

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমরা ধরে নেব যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি চাইলে অপ্ট-আউট করতে পারেন৷ গ্রহণ করুন আরও পড়ুন